বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ই-কমার্স বিজনেস – তরুণ সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের দারুণ ক্ষেত্র!


সাথী পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারথাকেন ঢাকার মাহাখালি এলাকায়।  প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। কাজ শেষে বাসায় ফেরেন সন্ধ্যা সাতটার দিকে অফিসে থাকেন আট ঘণ্টা, আর সাড়ে তিন ঘণ্টা কেটে যায় যানজটে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নিজের পরিবারের দৈনন্দিন কাজ করেন, বাচ্চাদের সময় দেন। ব্যস্ততার কারণে সংসারের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে সময় বের করতে পারেন না তিনি। অনেক দিন ধরেই ভাবছিলেন, ঘরে বসে কীভাবে কেনাকেটা করবেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

ই-কমার্স বিজনেস  তরুণ সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের দারুণ ক্ষেত্র


বাসায় ফিরে কিছুটা সময় ইন্টারনেটে ঘোরাঘুরি করা সাথীর দীর্ঘদিনের অভ্যাস। বছর খানেক আগে একদিন অনলাইনে ই-শপিংয়ের খোঁজ পান তিনি। প্রথম দিকে শুধু অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পোর্টালগুলোতে ঘোরাঘুরি করতেন। কোন পণ্যের দাম কত,মান কেমন,বিক্রেতা কোন এলাকারএসব দেখতেন তিনি। মাস ছয়েক আগে একদিন সাহস করে একটি ওয়াটার পিউরিফাইয়ার কেনার জন্য বিক্রেতার মুঠোফোনে কল দেন। দামে বনে যাওয়ায় অর্ডার করে ফেললেন। টাকাও পরিশোধ করে দিলেন বিকাশের মাধ্যমে। পরদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে সাথী দেখেন যে বিক্রেতা তার ঠিকানায় ওয়াটার পিউরিফাইয়ার পৌঁছে দিয়ে গেছেএভাবেই তিনি অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটায় অভ্যস্ত হলেন। গত ছয় মাসে তিনি যেমন কিনেছেন পোশাক তেমনি কিনেছেন গৃহস্থলী সামগ্রী। এখন লেনদেন আর নিরাপদ হয়েছে। আগে তিনি পণ্যের জন্য অগ্রিম পেমেন্ট করে দিতেন এখন হোম ডেলিভারি নেওয়ার সময় বিল পেমেন্ট করতে পারছেন।

সাথী বলেন, অনলাইন কেনাকাটা আমার জীবনকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে। একটি জিনিস কিনতে আগে পুরো বিপণিবিতান ঘুরতে হতো। এতে অনেক সময় নষ্ট হতো। গত ছয়মাস ধরে প্রায় ৮০ শতাংশ পন্যই কিনেছি অনলাইনে।

এভাবেই বাংলাদেশে এখন ক্রমশ অনলাইন বেচাকেনার প্রসার ঘটছে। অনলাইন বেচাকেনায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন ক্রেতারা। নগরজীবনের ব্যস্ততায় একটু স্বস্তি দিয়েছে এই অনলাইন বাণিজ্য। একটি মুঠোফোনই সহজ করে দিচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতার জীবনাচরণ। মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

ক্রেতা-বিক্রেতার এই চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অনলাইনে বেচাকেনার প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমেও বেচাকেনা চলে। জমি,ফ্ল্যাট,গাড়ি থেকে শুরু করে হাঁড়িপাতিল,মাছ-মাংস পর্যন্ত বিক্রি হয় এসব ওয়েবপোর্টালে। এমনকি কোয়েল পাখির ডিমও বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।

সেলবাজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০১১ সালে প্রথম অনলাইনে বেচাকেনা শুরু করে। এরপরেই অনলাইন বেচাকেনার প্রসার ঘটতে থাকে। বর্তমানে এমন ২০ থেকে ২৫টি ওয়েবপোর্টাল রয়েছে। এ পোর্টালগুলো ব্যবসায়িকভাবে বেশ সফল হতে শুরু করেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ এসব পোর্টাল দেখছে,এমন বিবেচনায় এখানে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অনলাইন বেচাকেনা হয় দুইভাবে। বিক্রয়ডটকম, এখানেই ডট কম, ক্লিক বিডি, আমার গ্রাম ইশপএসব ক্লাসিফাইড এডভারটাইজিং সাইট এখন এখন কেনা বেচার জন্য জনপ্রিয় হয়ে গেছে। এখানে বিক্রেতা তাঁর পুরোনো পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। আগ্রহী ক্রেতা সেই বিজ্ঞাপন দেখে ওই বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে দুজনের আপসের ভিত্তিতে পণ্যটি বেচাকেনা হয়। এ জন্য অবশ্য নগদ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এসব ওয়েবসাইটে এখন নতুন পণ্যের বিক্রির বিজ্ঞাপনও দেওয়া শুরু হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাঁর নিজস্ব পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।

আবার বেশ কিছু ওয়েবপোর্টাল রয়েছে,যারা নিজেরাই পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ করে। ক্রেতা শুধু পণ্য পছন্দ করে অনলাইনে কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করেন। বাগডুম, দারাজ, প্রিয় শপ, অথবা – ইত্যাদি অনলাইন শপের মাধ্যমে আপনি এখন ঘরে বসে যেকোনো পন্য অর্ডার করতে পারছেন। বিক্রয় করার জন্যও প্লাটফর্ম আছে আপনার জন্য! অন্যদিকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমেও তাদের পণ্য বিক্রি করছে। বেশ কিছু ব্যতিক্রমধর্মী ইকমার্স সাইট হয়েছে। শুধু তাই নয়! এখন ঘরে বসে অ্যামাজন, ইবে, আলি এক্সপ্রেস কিংবা ইন্ডিয়ান ফ্লিপকার্ট এর মত সাইট থেকে বিদেশী পন্য কেনার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ করে দিচ্ছে টপ অল ব্র্যান্ড এর মত ইকমার্স সাইট। তারা বিদেশী পণ্যের আমদানিকারক। আপনি তাদের সাইট ঘুরে যেকোনো বিদেশী পন্য কিনতে পারবেন আবার তাদের মাধ্যমে আপনার পছন্দের বিদেশী পন্যটি বাইরে থেকে কিনিয়ে আনতে পারবেন। 

অনলাইনে কেনাবেচার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভোক্তা আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশিরা কী ধরনের ওয়েবপোর্টালে যেতে পছন্দ করেনতার একটি চিত্র পাওয়া যায় গুগল ট্রেন্ডসের ২০১৩ সালের হিসাবে। সেখানে দেখানো হয়েছে, গুগল সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে এসএসসির ফলাফলের ওয়েবসাইটে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করেছেন বাংলাদেশিরা। পরের স্থান রয়েছে এইচএসসি ফলাফলের ওয়েবসাইট। আর গুগল দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রবেশ করেছেন তৃতীয় সর্বাধিক ব্যক্তি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, চতুর্থ স্থানটি দখল করে আছে অনলাইন বেচাকেনার ওয়েবপোর্টাল বিক্রয়ডটকম। এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফল জানতে বছরে এক দিনই সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা হয়। নিয়মিতভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিবেচনা আনলে ফেসবুকের পরেই বেচাকেনার ওয়েবপোর্টালে প্রবেশ করেন বাংলাদেশিরা। অর্থাৎ বাংলাদেশে এখন মানুষ এই ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী। কেউ পন্য কিনুক বা না কিনুক দিনে অন্তত একবার করে হলেও অনলাইনে কেচাবেচার ওয়েবসাইটে তারা ঢুকবেই।

1 টি মন্তব্য: